ফুটবলের খেলোয়াড়দের একান্ত পরিসরে টিভি ক্যামেরার অনুপ্রবেশ: এক অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃতি
সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে একটি বিতর্কিত প্রস্তাব—ম্যাচের আগে-পরে ড্রেসিংরুম ও পিচে টিভি ক্যামেরার প্রবেশাধিকার। এটা নিঃসন্দেহে ফুটবলের ঐতিহ্য এবং খেলোয়াড়দের গোপনীয়তার পরিপন্থী।
হ্যাঁ, আজকের সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর যুগে আমরা জানি—পুরো ৯০ মিনিটের খেলা অনেকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়, এবং ছোট ক্লিপ, মিম ও হাইলাইট দিয়েই অনেকে ফুটবল উপভোগ করেন। তবে তাই বলে খেলোয়াড়দের একান্ত পরিসরে ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ড্রেসিংরুম একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল—কৌশলগত আলোচনা, আবেগ প্রকাশ এবং দলের বন্ধন সেখানে গড়ে ওঠে। সেই স্থানকে যদি ক্যামেরার সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পরিসর ও মানসিক প্রস্তুতি ব্যাহত হবে।
একইভাবে, খেলার পর উল্লাসের মুহূর্তে ক্যামেরাম্যানদের অতিরিক্ত কাছাকাছি চলে যাওয়া অস্বস্তিকর। আজকের প্রযুক্তিতে জুম ব্যবহার করেই দূর থেকে মুহূর্তগুলো ধারণ করা সম্ভব—পিচে দৌড়ে ঢুকে পড়ার দরকার নেই। খেলোয়াড়দের উচিত এই ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া ।
সাবস্টিটিউটদের ম্যাচ চলাকালীন সাক্ষাৎকার নেওয়া আরেকটি অর্থহীন বিষয়। হয় তাঁরা ক্লান্ত, নয়তো হতাশ। অর্থপূর্ণ কিছু বলার সম্ভাবনা থাকে না। বরং বিরক্তি থেকে কিছু মন্তব্য ভাইরাল হয়ে গেলে পুরো সপ্তাহজুড়ে সেই ঘটনা নিয়ে মিম, ট্রল আর মিডিয়া হাইপ তৈরি হয়। পরে সেই খেলোয়াড়কে ইনস্টাগ্রামে ক্ষমা চেয়ে বার্তা দিতে হয়—এবং সেটাই হয়ে যায় তাঁর স্থায়ী পরিচয়ের অংশ।
এই প্রবণতা মূলত টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য কনটেন্ট জেনারেশনের মাধ্যম। তারা মানে করে দর্শকরা বিশ্লেষণ নয়, শুধু ভাইরাল কনটেন্টই চায়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে—অনেক ফুটবলভক্ত গভীর বিশ্লেষণ, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টি পছন্দ করেন।
আমরা চাই, ফুটবল কাভারেজ হোক শ্রদ্ধাপূর্ণ, চিন্তাশীল ও খেলাটির প্রতি ভালোবাসা থেকে পরিচালিত। না যে শুধুমাত্র তুচ্ছ ও তাত্ক্ষণিক বিনোদনের পেছনে ছুটে চলা।